স্বদেশ ডেস্ক:
ভিআইপি প্রতারক রিজেন্ট হাসপাতালের সাহেদ করিমের মতো জেকেজি হেলথ কেয়ারের ডা. সাবরিনা ও আরিফুল হক চৌধুরী দম্পতি করোনা মহামারীতে মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করেছেন। তারা ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের কার্যক্রম নিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেন। টাকা নিয়ে দেন ভুয়া করোনা সনদ। তাদের প্রতারণার শিকার হয়েছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। এমনকি তারা রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে ঢাকা মহানগর পুলিশ সদস্যদের করোনার নমুনা সংগ্রহের নামে প্রতারণা করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডা. সাবরিনা ও আরিফুল হক চৌধুরী দম্পতি নিজেদের রক্ষা করতে পারেননি। প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়ে তারা কয়েক মাস ধরে কারাবন্দি।
স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের বিনামূল্যে করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের অনুমতি দিয়েছিল। এ অনুমতি নিয়ে তারা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পিপিইসহ নানা সামগ্রী হাতিয়ে নেন। এর পর শুরু করেন টাকার বিনিময়ে মানুষকে ভুয়া সনদ দেওয়ার কার্যক্রম। জেকেজি হেলথ কেয়ারের করোনা পরীক্ষার কোনো ল্যাব বা পরীক্ষাগার ছিল না। কম্পিউটারে ফল লিখে তা ইমেইলে রোগীর কাছে পাঠিয়ে দিতো জেকেজি হেলথ কেয়ার। এ অভিযোগে বিদায়ী বছরের ২৩ জুন জেকেজি হেলথ কেয়ারের প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক চৌধুরীসহ প্রতিষ্ঠানটির কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর পর তাদের জবানবন্দিতে বেরিয়ে আসে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সাবরিনার নাম। প্রথমে সাবরিনা জেকেজির সঙ্গে থাকা তার সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন। কিন্তু নিজেকে শেষরক্ষা করতে পারেননি। গত ১২ জুলাই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এর পরই চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হন ডা. সাবরিনা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও ঠিকাদারি কাজ করতেন ডা. সাবরিনা। এ কাজ করতে গিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের অনেক কর্মকর্তার সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। এ সখ্যের সূত্রেই সাবরিনার হাত ধরে করোনার নমুনা সংগ্রহের কাজ পায় অখ্যাত জোবেদা খাতুন সর্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা বা জেকেজি হেলথ কেয়ার। তারা নমুনা পরীক্ষায় টেকনোলজিস্ট ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণের জন্য রাজধানীর তিতুমীর কলেজে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে। ১২ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জেকেজির প্রস্তুতি দেখতেও যান সেখানে। পরবর্তী সময় জানা যায় নমুনা সংগ্রহ ও কর্মীদের প্রশিক্ষণের নামে তিতুমীর কলেজে মাদক ও নারীবাণিজ্যের আখড়া গড়ে তোলা হয়েছে। এ নিয়ে সেখানে কলেজের কর্মচারীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হলে ধাপে ধাপে ডা. সাবরিনা, আরিফুল হকের আসল চেহারা বেরিয়ে আসে।